গত জীবনের স্মৃতিচারণ ১ম পর্ব
আমি আমার নানাবাড়ি জন্মগ্রহন করি।আমরা দুই ভাই এক বোন।আমই ১ম সন্তান।১৯৯৮ সালের শীতকালে আমার জন্ম হয়,সম্ভবত নভেম্বর ডিসেম্বরে হবে।সে বছর বন্যা হয়েছিল।আমার মনে আছে,বন্যার পানিতে আমাদের বাহিরবাড়ি আম্মা আমাকে গোসল করাতেন।আমার পিতার নাম মোহাম্মদ মোসলেম মোল্লা,আর দাদার নাম মোহাম্মদ নাসিরুদ্দিন মোল্লা।আর আমার দাদার পিতার নাম মো.আকাব্বার মোল্লা।আকাব্বার মোল্লার পিতার নাম কি ছিল,তা জানিনা।
আমাদের এলাকাটি হল পল্লি এলাকা মানে গ্রামাঞ্চল।
আমি নানাবাড়ি জন্মগ্রহন করলেও বেড়ে উঠি দাদাবাড়ি।আমাদের এলাকাটা অনেক সুন্দর।সবুজ শ্যামল গাছগাছালি,ঘন ঘন পুকুর, খানিক দূরে চকের ভিতর দিয়ে বয়ে গেছে আঁকাবাকা ভুবনেশ্বর নদী।এলাকার মানুষজনও সাদাসিধা সরলসুজা।ঝগড়া নাই মারামারি নাই,সবাই মিলে মিশে থাকে,যেন ভাই ভাই।এলাকার মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস হল কৃষি।বিশেষ করে মৌসূমি ফসল ফলানো হয়,এবং সেগুলো বাজারে বিক্রি করে সারা বছর সংসার চালায়।আমার দাদার অনেক জমি ছিলো, তিনিও মৌসূমি ফসল চাষ করতেন,এবং তা বাজারে বিক্রি করতেন, এবং তা দিয়ে সারা বছর সংসার চালাতেন।
আমার ঠিকানা:
আমি ফরিদপুর জেলার,সদরপুর থানার, হাট কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের, দড়িকৃষ্ণপুর গ্রামে জন্মগ্রহন করি।
ভুল হয়েছে, আমি আমার নানার বাড়ি জন্মগ্রহন করেছিলাম,কিন্তু উপরে যে ঠিকানা দিয়েছি,সেটা আমার দাদার বাড়ির ঠিকানা।এখন আমার নানার বাড়ির ঠিকানা দেই-
চরভদ্রসন থানার,গাজিরটেক ইউনিয়নের,চর সর্বান্দিয়া গ্রামে আমার নানা বাড়ির অবস্থান।এখানেই আমার জন্ম হয়।কিন্তু দাদাববাড়ির প্রিত আমি বেশি আকর্ষন অনুভব করতাম।
ছোটবেলায় অধিকাংশ সময় আমি আমার দাদাবাড়ি কাটিয়েছিশিশুমন স্বাভাবিকভাবেই খেলাধুলার প্রতি আসক্ত থাকে।আমিও ছোটবেলায় খেলাধুলার প্রতি আসক্ত ছিলাম সারাক্ষন।অন্যান্ন খেলার সাথীদের সাথে আমিও খেলতাম।আমরা সমবয়সী অনেক পুলাপান ছিলাম।কেউ কেউ ছিল আমার থেকে বয়সে বড়,আবার কেউ কেউ ছিল আমার থেকে বয়সে ছোট।
যারা বয়সে আমার থেকে বড় ছিল,তাদের কয়েকজন হল-মুশারফ,মাসুদ,রফিক,সুজন,নাজমুল, সামীম আরো অনেকেই।
আর আমার থেকে যারা বয়সে ছোট ছিল,ৎদের কয়েকজন হল- বাবু,তাইজুল,আব্দুর রহমান,শাহীন,জাহীদ আরো অনেকেই।
গফফার পাগলার বাড়ি মেলা
প্রতি বছর গফফার পাগলার বাড়ি মেলা হতো।আমরা দল বেধে যেতাম,এবং অনেক আনন্দ করতাম।আসার সময় সিগারেট টানতে টানতে চলে আসতাম।আমি সিগারেট খেতামনা,কিন্তু বছরে দুএকবার এমন পাল়লায় পড়লে খেতাম,যেমন গফফার পাগলার বাড়ি মেলা,আফসার ফকিরের বাড়ি(মাসুদগো বাড়ি)মেলায়।
হেটেই যেতাম আবার হেটেই আসতাম,এর মধ্যেই আনন্দ পেতাম।
আমার পড়ালেখা শুরু
আমি আমার মায়ের কাছে প্রাথমিক বর্ণমালা শিক্ষা নিয়েছিলাম। তারপর শিকদাড় বাড়ি একটি ব্রাক স্কুলে ভর্তি হলাম।এটাই আমার জীবনের প্রথম স্কুল,কিন্তু সেখানে বেশিদিন থাকতে পারিনি।কারন আমাদের এলাকা থেকে কয়েকজন সেই স্কুলে যেতাম।কয়েেকদিন পড়ানোর পর বাছাইপর্ব শুরু হলো।ছয় বছরের কম হলে টিকতনা।আমার সাথে কয়েকজন মেয়ে ছিল,যার মধ্যে আমার কাজিন সাথীও ছিল,কিন্তু ওদের বয়স কম ছিল।সুধুমাত্র আমার বয়স ছয় বছর ছিল,অন্যদের চার পাঁচ বছর করে বয়স ছিল,যেকারনে আমিতো ব্রাকে টিকে গেলাম,কিন্তু ওরা কেউ টিকলনা।আমার একা একা ভালো লাগছিলোনা,সুতরাং আমিও কান্না কাটি করে ওদের সাথে চলে এলাম।ছোটবেলায় বলদ টাইপের ছিলাম,কারন তখন ব্রাকে পড়লে এক ক্লাস উপরে থাকতে পারতাম,সেই বলদ এখনো রয়েই গেলাম,জীবনে চালাক চতুর হতে পারলামনা।
যাহোক,কয়েকদিন পর আমাদের পাড়ায় একটি স্কুল নির্মান করা হচ্ছিলো,নির্মাতা ছিলো ছুরাফ মাস্টার,স্কুলটি ছিল প্রাইমারি।আমার খুশিতে বাগবাগ ছিলাম।কারন দূরে গিয়ে পড়ালেখা করাটা কষ্টকর ছিল।বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্যতো একপ্রকার অসম্ভব।
যাহোক আমরা কয়েকজন সেখানে ভর্তি হয়ে গেলাম,আমরাই ছিলাম সেই স্কুলের প্রথম ছাত্র।আমার রোল ক্লাস ওয়ান থেকে থ্রী পর্যন্ত এক হয়েছিলো, আমার মতো গাধার রোল যেই স্কুলে এক হয়,সেই স্কুলটা কেমন হতে পারে,পাঠকরা অবশ্যই বুঝতে পারছেন।
আমিতো রোল ঠোল কি জিনিস তাও বুঝতামনা।ক্লাস টুতে যখন আমার রোল এক হল,আব্বু এসে আম্মার কাছে বলল,সুলাইমানের রোল এক হয়েছে শুনলাম।আব্বার কথা শুনে আমি ভীত হচ্ছিলাম,কারন আমি ভালো ছাত্র হিসেবে কমপক্ষে পঞ্চাশ হওয়া উচিত ছিল।আমি আব্বাকে অনেক ভয় পেতাম,রোল এত কম কিভাবে বানালাম! এজন্য আব্বা আমাকে মারতে পারেন,এজন্য সেখান থেকে কেটে পড়লাম।রোল এক হওয়া যে ভালো এই জ্ঞানও আমার ছিলোনা।
এই স্কুলে পড়ালেখার মান তেমন ভালো ছিলনা,সুতরাং আমি ওয়ান থেকে থ্রী পর্যন্ত পড়লাম।যখন ফোরে উঠলাম,তখন আম্মা আমাকে ঐতিয্যবাহি কৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিলেন এক ক্লাস নিচে,মানে ক্লাস থ্রীতে।আমরা এই স্কুলকে চিতাখোলা স্কুল বলতাম,কারন পাশে চিতাখোলা ছিলো,যেখানে হিন্দুরা লাশ দহন করত।
এই স্কুলের অনেক ইতিহাস রয়েছে।আমাদের এলাকার অনেক বড় বড় মানুষ,এই স্কুলে পড়ালেখা করেছেন।মিজান কাকা,জুবায়ের,রুমা সহ আরো অনেকেই পড়ালেখা করেছেন।আমার চাচাত বোন সুমি ও এখানেই পড়ালেখা করেছেন।
আমি যখন দুই বছরের কচি শিশু,তখন মিজান কাকা তার সাইকেলের পিছনে করে আমাকে এই স্কুলে নিয়ে আসতেন,এবং কাকার পাশে আমাকে বসিয়ে রাখতেন।একদিন দিদিমনি ছাড়, মিজান কাকাকে বলল,এটা কে?
মিজান কাকা বললেন আমার ভাতিজা।
দিদিমনি ছাড় বললেন,শিশুদেরকে আর ক্লাসে আনবেনা।
তারপর থেকে মিজান কাকা আমাকে আর ক্লাসে নিতেন না। আমার আম্মা এই দিদিমনি ম্যাডামের কাছেই নিয়ে গেলেন আমাকে ভর্তি করানোর জন্য।দিদিমনি তখন ক্লাস ফোরের ক্লাস নিচ্ছিলেন।দিদিমনি ছাড় আমাকে ক্লাস ফোরের বাংলা বই থেকে রিডিং পড়া ধরলেন।আমি রিডিং পড়া শুরু করলাম। আমার রিডিং পড়া শুনে দিদিমনি অভিভূত হয়ে পড়লেন,এবং ক্লাস ফোরের ছাত্রদেরকে ধমক দিচ্ছিলেন,এবং বলছিলেন, দেখলে,ছেলেটা কত সুন্দর রিডিং পড়লো,আর তোমরা পারোনা!!
তারপর দিদিমনি আমাকে ক্লাস থ্রীতে ভর্তি করে নিলেন।দিদিমনি আমাকে অনেক ভালবাসতেন মিজান কাকার ভাতিজা হওয়ার কারনে,কারন মিজান কাকা ছিলো দিদিমনির প্রিয় ছাত্র।
আমি গুনের অংক পারতামনা,ভাগের অংক ভালো পারতাম।আমি দেখেছি দিদিমনি আমাকে তার কোলের মধ্যে নিয়ে গুনের অংক শিখিয়ে দিয়েছিলেন,তারপর থেকে জীবনে কোনোদিন গুনের অংক ভুলিনি। আসলে বাচ্চাদেরকে মেরে কাজ হয়না,অনেক সময় মারার থেকে আদর করলে বেশি কাজ হয়।
দিদিমনি ছিলো অত্যান্ত করা মেজাজের ম্যাডাম, তার ভয়ে সব ছাত্ররা আতঙ্কিত থাকত, এবং তার পিটুনি খেয়ে ছাত্ররা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করত,দিদিমনির কাছে কারো কোনো প্রয়োজন হলে, আমাকে আগে পাঠাতো,আমরা কয়েকজন ছাড়া দিদিমনির সাথে কথা বলার সাহস কেউ পেতনা।
আমি আমার স্কুলজীবনে শিক্ষকদের নিকট থেকে যথেষ্ট আদর এবং প্লশংসা পেয়েছি।তবে খছু ব্যাতিক্রম ঘটনাও ঘটেছে,যা ছিলো খুবই দুঃখানক।
একবারের ঘটনা।ক্লাস ফাইভের মডেলটেষ্ট পরিক্ষার সময়,যেটা সমাপনি পরিক্ষার আগে নেওয়া হয়।বলে রাখা প্রয়োজন, সব প্রাইমারি স্কুলেের প্রশ্নপত্র একই হয়ে থাকে।সেই সুবাধে আমাদের এলাকার স্কুল এবং কৃষ্ণপুর আমি যেই স্কুলে পড়তাম, দুই স্কুলের প্রশ্নপত্র একই ছিল। আমাদের এলাকার স্কুলটা ছিলো নামে মাত্র স্কুল
আসলে কোনো কামের ছিলোনা।আমরা আমাদের এলাকার স্কুলটিকে ভাঙা স্কুল বলে ডাকতাম।একদিন ঘুরতে ঘুরতে ভাঙা স্কুলের দিকে গিয়ে দেখি,পরিক্ষার সবগুলো প্রশ্নপত্র খোলা জায়গায় একটি চেয়ারের উপর রেখে দেওয়া আছে,আমি মহা সুযোগ মনে করে সেখান থেকে ছয়টি প্রশ্নপত্র চুরি করলাম।যেহেতু আমাদের স্কুল আর এই ভাঙা স্কুল দুটোই একই প্রাইমারি স্কুল,সুতরাং সবগুলো প্রশ্নপত্র কাজে লেগেছিলো।
আমি যেহেতু বলদ ছিলাম এজন্য পরিক্ষার মধ্যেও প্রশ্নপত্র গুলো অন্যদেরকে দেখানোর জন্য সঙ্গে করে নিয়ে গেলাম।াআমার সহপাঠী শাহাদাত যখন দেখলো আমার বাড়ি থেকে নিয়ে আসা প্রশ্নপত্রের সাথে পরিক্ষার প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল রয়েছে, তখন সে হিংসা বশত দিদিমনি ম্যাডামকে বিষয়টা বলে দিলো।দিদিমনি আমাকে অফিসরুমে ডেকে নিয়ে কঠোরতার সহিত তিরস্কার করলেন।আমিও ক্ষমা চেয়ে নিলাম জীবনে আর এমনটা করবনা,সেদিনের ঘটনার পর থেকে আমি দিদিমনির দৃষ্টি থেকে পরে গিয়েছিলাম।অন্যান্য ম্যাডাম এবং ক্লাসের সহপাঠী দের নিকট চোর নামে খ্যাতি অর্জন করেছিলাম।
ঘটনাটা ছিলো খুবই হতাশাজনক।সেই বলদ এখোনো রয়েই গেলাম চালাক চতুর হতে পারলামনা এখনো।
মিজান কাকার সম্পর্কে --
মিজান কাকা হল আমার চাচাদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট।তিনি যখন ক্লাস ফাইভে পড়েন তখন আমার বয়স দুই তিন বছর।মিজান কাকা মাছ মারার পটু ছিলেন,বর্ষাকাল এলে তিনি মাছ মারতেন,বড়শি দুয়ারী, ঘুনি, পারন ইত্যাদি দিয়ে।মিজান কাকা মাঝে মধ্যে পদ্মায় চলে যেতেন মাছ মারার জন্য।
বর্ষাকালের স্মৃতি
বর্ষাকাল যেমন ছিল আনন্দের তেমনই ছিলো ভয়ংকর। শিয়াল,সাপ, খরগোশগুলো মানুষের বাড়ির মধ্যে চলে আসতো,আমরা বাচ্চারা শিয়ালগুলোকে দৌড়াতাম,অনেক শিয়াল পিটিয়ে মেরে ফেলতাম।অনেক শিয়াল খরগোশ মানুষের গরুঘরে গিয়ে ঢুকতো।
একবারের বন্যায় আব্বা একটি বড় জ্বাল পেয়েছিলেন,যেটা আমাদের বাড়ির সামনের পুকুরের দক্ষিনপাশে পেতে রাখা হয়েছিল। অনেকগুলো রুই কাতলা সহ বড় বড় মাছ সে জ্বালে জড়িয়েছিলো।নিজেদের চাহিদা মিটিয়েও,আত্মীয় স্বজনকে কিছু মাছ দিয়েছিলাম।
আখের রস জ্বাল দেওয়া তাফাল নিয়ে বর্ষাকালে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যেতাম,আমি আমাদের ছাগলের জন্য পাটের পাতা নিয়ে আসতাম।সাঁতার না জানা বাচ্চাদের জন্য বর্ষাকাল ছিলো বিপজ্জনক।আমি আনেক ছোটবেলা থেকেই সাতার কাটতে জানতাম,আমাকে নিয়ে তেমন ভয় ছিলোনা।
বর্ষাকালে বাড়ির আনাচে-কানাচে বোয়াল মারা বরশী পেতে রাখা হতো।দু একটি বোয়ালমাছ ধরাও পড়ত।সাধারনতঃ ব্যাঙ,কই মাছ দিয়ে বড়শীতে টোপ গাথা হতো,বোয়াল মারার জন্য।
বন্যার পানি কমপক্ষে দুই থেকে তিন মাস থাকতো।পানি যখন কমে যেত তখন মাছ মারার আরেকটি উপযুক্ত সময় ছিলো।বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর,এলাকার কৃষকরা মাঠে বিভিন্ন ফসল বুনতো।বন্যা হলে একটি উপকার হতো,তা হলো,পলি মাটি পরে জমির উর্বরতা বেড়ে যেত,এবং ভালো ফসল হতো।
বন্যার পরে সাধারনত মুশুরী ছোলা ইত্যাদি ফসল বপন করা হতো।
আমাদের এলাকায় যেসব ফসল ভালো জন্মাতো
১।ধান ২।পাট ৩।ছোলা ৪।মুশুরী ৫। খেসারী ৬।আখ ৬।তরমুজ ৭।বাঙ্গী ৮।মেস্তা ৯।মরিচ ১০।পেঁয়াজ ইত্যাদি ফসল ভালো জন্মাতো।
ধান
আমাদের এলাকার প্রধান ফসল ছিলো ধান।সরকার থেকে আমাদের এলাকায় ধান ক্ষেতে পানি দেওয়ার জন্য বড় একটি গভীর নলকূপ বসানো হয়েছিলো,যেটাকে আমরা ডিপ মেশিন বলতাম।সোনামিয়ারা ডিপমেশিনের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করতেন।বিনিময়ে এলাকাবাসিরা তাদেরকে কিছু ধান দিত।
আমরা ডিপ মেশিনে গিয়ে মাঝে মধ্যে গোসল করতাম,ভালোই লাগতো।
পাট পাট হলো এক প্রকার গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। আমাদের ফরিদপুর পাট চাষের জন্য বিখ্যাত। বাংলাদেশে সবচেয়ে ফরিদপুর অঞ্চলে বেশি পাট চাষ করা হয়।পাটের বীজ খেতে বপন করা হয়।কয়েকদিনের মধ্যেই বীজ থেকে ছোট গাছ বের হয়।গাছ যখন সাত আট ইঞ্চি লম্বা হয় তখন কৃষকরা কিছু গাছ তুলে ফেলে দেন,যাতে বাকি গাছগুলো মোটাতাজা হতে পারে। কিছু দিন যেতে না যেতেই পাটগাছগুলো এক দেড় মিটার লম্বা হয়ে যায়। পাটগাছগুলো সাধারনতঃ তিন থেকে চার মিটার লম্বা হলে কাটার উপযুক্ত হয়।পাটগাছ গুলো কেটে পানির ভিতর পঁচানো হয়,,যাকে আমরা গ্রাম্য ভাষায় বলি পাট জাঁক দেওয়া।সাধারণত পনেরো থেকে বিষ দিনের মধ্যে পাট জাঁক এসে যায়,এবং তখন পাটখড়ি থেকে পাটকে আলাদা করা হয়।তারপর পাট ধুয়ে রোদে শুকানো হয়।শুকনো পাট বাজারজাত করা হয়। পাটের মৌসূমে আমার স্মৃতি: ছাগল সাধারণত পাটের পাতা ভালো খায়,এজন্য আমাদের ছাগলগুলোকে কেটে রাখা পাটের পাতা খাওয়াতাম। রাস্তার পাশে পাটের বোঝা ফেলে রাখা হতো,আমরা পাটের বোঝার উপর শুয়ে থাকতাম। এলাকার মহিলারা রাস্তার পাশে বসে পাট নিত।আর আমরা পাটখড়ি দিয়ে বিভিন্ন খেলনা বানাতাম,ঘর বানাতাম,এগুলো ছোটবেলার স্মৃতি সরুপ লিখে রাখলাম। অনেকসময় বন্যার পানিতে পাটের জাকগুলো ভেসে যেত,দূর থেকে কত পাটের জাক আমাদের নদীতে ভেসে আসত। কোথায় রে ভাই হারিয়ে ফেললাম সেই দিনগুলো, আর কি কখোনো ফিরে পাব, সেই দিন গুলো। সেতো অতিতের খাতায় পাতায় লুকিয়ে গিয়েছে, এখন সুধু স্মৃতি হয়ে বেঁচে আছে ভাঙা হৃদয়ে।। ছোলা: ছোলাও একপ্রকার গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ, কিন্তু বেশি লম্বা হয়না।সাধারনত ৮-৯ ইঞ্চি লম্বা হয়। আমাদের এলাকায় ছোলাও চাষ করা হতো,তবে তেমন একটা না,একসময় খুব বেশি চাষ হতো,এখন তেমন একটা হয়না। ছোলা নিয়ে আমার স্মৃতি: আমরা ছোলা গাছ উঠিয়ে আগুনে পুরিয়ে ছোলাগুলো খেতাম,দারুন টেষ্ট ছিলো।একদিন মিজান কাকা,কাশেম কাকা,এবং আমি চকের ভিতর দিয়ে হাটছিলাম।হঠাৎ ছোলা পুরিয়ে খেতে মন চাইলো।পাশে ছিলো নেদু ভাইয়ের খেত।মিজান কাকা সেই খেত থেকেই কিছু ছোলা গাছ উঠিয়ে নিলেন,দূর থেকে নেদু ভায়ের বৌ ব্যাপারটা লক্ষ করছিলেন,তিনি এগিয়ে এলেন।মিজান কাকা সম্ভবত বলেছিলো, আপনাদের খেত তা আমি জানতামনা, সরি!নেদুর বৌ বলল,ছোলাও যে আপনি উঠিয়েছেন আমিও তা জানতামনা,যদি জানতাম এতদূর আসতাম না। একবার আমাদের বাহিরবাড়ি সন্ধার পর কিছু ছোলাগাছ পুরিয়েছিলাম,যেখানে কিছু ছাগলের নাদি ছিলো। বৈশাখি কাকি,প্রথমেই একটি ছাগলের নাদি মুখে দিয়ে বলল,ছোলা এমন লাগে কেন? মুসুরি আমাদের এলাকায় মুসুরি ও চাষ করা হতো।সাধারনত বর্ষাকালে পানি নেমে যাওয়ার পর, মাটি কিছুটা শক্ত হলে,বড় ট্রাক্টর দিয়ে হাল দিয়ে মুসুরি দানা বপন করা হতো। মুসুরি ও গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ, ছোলা গাছের মতোই লম্বা হয়। আঁখ আমাদের এলাকায় প্রচুর পরিমানে আখ চাষ করা হতো। আমার আব্বাও আখ চাষ করতেন।আখ চাষ শুরু থেকে মিঠাই বাজারজাত করা পর্যন্ত পুরোটাই কষ্টসাধ্য কাজ। আখ চাষের পদ্ধতি আখের মাথা থকে বেছন সংগ্রহ করা হয়।বেছনগুলো ছোট ছোট করে কাটা হয়,এবং সেগুলো খেতে লাগানো হয়।কিছুদিনের মধ্যেই সেখান থেকে আখের গাছ অঙ্কুরিত হয়।ভালোমতো পরিচর্যা করলে তিন চার মাসেই আখগুলো বড় হয়ে যায়,কাটার যোগ্য হয়। আখ কাটার জন্য লেবার কিনে আনা হয়।তারা আখগুলো কেটে চেছে ছুলে,আটি বেধে,রস বের করার মেশিনের কাছে নিয়ে ফেলে।তারপর আখগুলো থেকে মেশিনের মাধ্যমে রস বের করা হয়।সেই রস তাফালে করে বড় মাটির চুলায় জ্বাল দেওয়া হয়। অনেক্ক্ষণ জ্বাল দিলে রসগুলো গুড় অর্থাৎ মিঠাইয়ে পরিনত হয়।মিঠাইগুলো চৌকোনা লম্বা একপ্রকার পাত্র যাকে আমরা যের বলি,তাতে ঢালা হয়। পরে সেগুলো বাজারজাত করা হয়। আখের মৌসুমে আমার স্মৃতি: আমার আব্বাও আখ চাষ করতেন।আখের অনেক জাত রয়েছে।সবচেয়ে মিষ্টি জাতটির নাম হল চেনিচম্পা।চেনিচম্পা আখ চেনার উপায় হল এর গায়ে ছোট ছোট কাটার মত থাকে যাকে আমরা উল বলতাম।এগুলো অনেক সময় শরীরের সাথে লেগে যেত এবং শরীর চুলকাতো।দারুণ বিরক্তিকর!আমরা খেত থেকে চেনিচম্পা আখ কেটে নিয়ে খেতাম,সেই স্বাদ বহুদিন যাবত আস্বাদন করিনা।জানিনা কোনোদিন আবার পাব কিনা! প্রতিদিন দুইবার আখ ভাঙানো হতো।সকালে এবং বিকালে।সকালে আখ ভাঙানোর শব্দে আমার ঘুম ভেঙে যেত।আমি দ্রুত হাত মুখ ধুয়ে, মগ নিয়ে এক মগ আখের রস নিয়ে আসতাম,রসের রঙ ছিলো পুরো সবুজ।দারুন টেস্ট ছিলো,এখন আর সেই টেষ্ট পাওয়া যায়না।হয়ত কোথাও কোথাও পাওয়া যায় কিন্তু আমাদের এলাকায় আর নেই। অতিতের খাতায় পাতায় হারিয়ে গেলো সেই দিন গুলো যখনই মনে পরে,ভাবনায় বিভোর হয়ে থাকি অনেকক্ষন। তরমুজ আমি জন্মের আগে নাকি আমাদের এলাকায় প্রচুর তরমুজ চাষ করা হতো।আমি সেগুলো দেখিনি,এজন্য আমি সে-সম্পর্কে বলতে পারবোনা কিছু। বাঙ্গি আমি যখন ছোট ছিলাম অর্থাৎ ২০০১—২০১৪ সাল পর্যন্ত আমাদের এলাকায় বাঙ্গি চাষ করা হতো না।২০১৫ সাল থেকে রমজান মাস উপলক্ষে প্রচুর বাঙ্গি চাষ করা হয়। *****★****** যেহেতু এটা একটি স্মৃতিচারনমূলক রচনা, সুতরাং হারানো জীবনের স্মৃতিগুলো এখানে বেশি গুরুত্ব পাবে। ছোটবেলার বিবিধ স্মৃতি টিভি আমি যখন ছোট ছিলাম তখন টেলিভিশন নামক শয়তানের বাক্সের তেমন বেশি প্রচলন ছিলোনা।যদি কোনো বাড়িতে টিভি ভাড়া করে আনা হতো, এলাকার মানুষ সব সেই বাড়িতে গিয়ে ভীর জমাতো,বিশেষ করে সন্ধার পরে। তখন বিটিভিতে জনপ্রিয় একটি অনুষ্ঠান হতো,প্রতি সপ্তাহে একবার, সন্ধ্যার পর।অনুষ্ঠানটির নাম হলো আলিফ লাইলা। এলাকার সব মানুষ আলিফ লাইলা দেখার জন্য আমাদের বাড়িতে ভীর জমিয়েছে।যখন নাকি অনুষ্ঠান টি শুরু হলো তখনই কারেন্ট চলে গেলো।মানুষ কারেন্টের আশায় অনেকক্ষন বসে থেকে পরে আশাহত হয়ে ফিরে গেলো।সেই আলিফ লাইলা অনুষ্ঠান এখন আর কেউ দেখেনা।মানুষের রুচি এবং প্রকৃতিতে পরিপাটি এসেছে। খেলাধুলা ছোটবেলায় সমবয়সীরা একসাথে খেলাধুলা করতাম।একেক সিজনে একেক রকম খেলা ছিল।গোল্লাছুট, দাড়িয়াবান্ধা ইত্যাদি খেলতাম।আরো খেলতাম গাছমাছ,ফুটবল, ক্রিকেট,কুস্তি লড়াই,মারামারি ইত্যাদি।যখন অনেক ছোট ছিলাম তখন খেলতাম,কুতকুত,আপ্পা ধাপ্পা ইত্যাদি, ছেলেমেয়ে একসাথে এগুলো খেলা যেত। কিছু স্মৃতি আমার সেজো কাকার নাম লিটন,তিনি অনেক গুলো বিয়ে করেছেন।তার প্রথম স্ত্রীর ভায়ের নাম ছিলো তুহা।ঢাকায় থাকত।ঈদে বেড়াতে আসত।আমরা বিভিন্ন সিজনে বিভিন্ন খেলাধুলা করতাম। তুহা যখন বেড়াতে এসেছিলো আমরা তখন মারামারি খেলছিলাম,কিল, ঘুসি, লাথি এগুলো।তুহাও আমাদের সাথে এই খেলায় যোগ দিলো।তুহার শরীর ছিলো লোহার মত।যত আঘাতই খেত,কান্না করতনা।রফিক তুহাকে সজোড়ে আঘাত করলে তুহা উড়ে গিয়ে পাশের খাদের মধ্যে পড়ল।কিন্তু কি আশ্চর্য! একটুও কান্না করলনা,বরং হাসতে ছিলো। ক্রিকেট /ফুটবল ছোটবেলায় ক্রিকেটও খেলতাম।ভিন্ন গ্রামের ছেলেদের সাথে টিম রাখতাম। অনুরূপ ফুটবল ও খেলতাম।পড়ালেখার মধ্যে যদিও খেলাধুলার সময় তেমন পেতামনা তবুও যতটুকু পেতাম খেলাধুলায় ই ব্যায় করতাম।
0 comments:
Post a Comment