হারানো জীবনের স্মৃতি: প্রথম পর্ব

 হারানো জীবনের স্মৃতি: প্রথম পর্ব


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম


আমি আমার নানাবাড়িতে ১৯৯৮ সালের শীতকালে জন্মগ্রহণ করি। ছোটবেলার একটি ঘটনা আমি আজও ভুলতে পারি না।

আমার আম্মা একদিন নানাবাড়ির চৌকির ওপর আমাকে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছিলেন। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে আমি কান্না শুরু করি। তখন আমার আম্মার মামাতো বোন সুরাইয়া দৌড়ে এসে আমাকে কোলে তুলে নেন এবং আম্মার কাছে নিয়ে যেতে চান। কিন্তু যখন আমাকে তাঁর কাঁধে তোলার চেষ্টা করেন, হঠাৎ তাঁর হাত ফসকে আমি মাটিতে পড়ে যাই।

অনেকক্ষণ দম বন্ধ হয়ে ছিল—পরিবারের সবার আতঙ্কিত চেহারা আজও মনে আছে। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমি বেঁচে যাই।

আজ যখন বড় হয়ে গুনাহ, অপরাধ আর নাফরমানিতে নিজেকে জড়িয়ে ফেলি, তখন ভাবি—হায়! যদি সেই শিশু অবস্থায়ই মারা যেতাম! তাহলে এইসব গুনাহের বোঝা বইতে হতো না…


তখন আমার বয়স মাত্র দুই-তিন মাস।


আরেকটি ঘটনা আমার হৃদয়ে গভীরভাবে গেঁথে আছে, যা আজও ভুলতে পারি না। এটি ছিল আমার জীবনের প্রথম পদ্মা নদী দর্শন।


ছোটবেলায় একদিন নানির সাথে পদ্মা নদী দেখতে গিয়েছিলাম, সাথে ছিলেন আম্মাও। কখনো আমি নানির কোলে চড়তাম, কখনো আবার আম্মার। পদ্মা নদী তখনও চোখে দেখিনি।

নানাবাড়ি থেকে পদ্মার দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। আমরা পায়ে হেঁটেই যাই। যাওয়ার পথে ছোট ছোট পুকুর দেখে আমি নানিকে জিজ্ঞেস করতাম,

— “নানি! এগুলো কি পদ্মা?”

নানি হেসে বলতেন,

— “হ্যাঁ, এগুলোই তো পদ্মা!”

কারণ তখন আমাকে প্রকৃত পদ্মার বিশালতা বোঝানো সম্ভব ছিল না।

কিন্তু যখন সত্যিকারের পদ্মা নদীর পাড়ে পৌঁছালাম, আমি হতবাক হয়ে গেলাম। এত বিশাল নদী, যার কোনো কূলকিনারা দেখা যায় না! আমি থ হয়ে তাকিয়ে রইলাম।


এই ঘটনার মাঝে একটি গভীর শিক্ষাও লুকিয়ে আছে।


যেমন, আত্মশুদ্ধির পথে যে তরিকতের সালিক চলে, তার চোখে মাঝপথে অনেক কিছু জ্বলজ্বল করে, অনেক “নূর” ঝলকে ওঠে। কিন্তু সালিক যদি সেসবের মোহে পড়ে যায়, তাহলে তার গন্তব্যে পৌঁছানো বিলম্বিত হয়। তাকে প্রতিটি বিভ্রান্তি এড়িয়ে, একনিষ্ঠভাবে হাকিকি সৃষ্টিকর্তার দিকেই এগোতে হয়।

Share on Google Plus

About হৃদয়ের প্রশান্তি

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.

0 comments:

Post a Comment