আত্মশুদ্ধির গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা
بسم الله الرحمن الرحيم
আত্মশুদ্ধির গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা
আল্লাহর নিকট ইসলাহের তাওফীক প্রার্থনা করুন
আমার হযরত (ডা. অবদুল হাই আরেফী) রাহ. বলতেন- আল্লাহ তাআলা বড়ই দয়ালুু ও মেহেরবান। মা-বাবার চেয়েও বহুগুণে বেশি। অতএব আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট নিঃসঙ্কোচে চাইতে থাক। এভাবে বল যে, আয় আল্লাহ! আপনি দুনিয়াতে আমাকে ভালো কাজ করার তাওফীক দিন অথবা আখেরাতের পাকড়াও থেকে রেহাই দিন। আমি আপনার দরবারে আমার সার্বিক বিষয় অর্পণ করছি। আপনি আমার হালত দুরস্ত করে দিন, আমাকে ইসলাহ করে দিন অথবা আখেরাতের আযাব থেকে মুক্তি দিন। এভাবে আল্লাহর কাছে চাইতে থাক। মানুষ এগুলোকে মামুলি বিষয় মনে করে। এজন্য এর প্রতি এত গরজ করে না। কিন্তু বাস্তবতা হল, ইসলাহের জন্য এটা অনেক মুফীদ ও উপকারী একটি মাধ্যম। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার নিকট সবসময় নাছোড়বান্দা হয়ে চাইতে থাকা।
আর যে ব্যক্তি এভাবে নিয়মিত দুআ করে সে অবশ্য নিজের সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টাও অব্যাহত রাখে। এজন্য দুআর অর্থ কখনও এই নয় যে, শুধু দুআই করে যাব। চেষ্টা, মেহনত-মোজাহাদা কোনো কিছুই আর করা লাগবে না! বরং আল্লাহ তাআলা সর্বক্ষেত্রে এ হুকুম দিয়েছেন যে, তুমি তোমার পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা মেহনত কর এবং আমার কাছে দুআ কর। চেষ্টাও অব্যাহত রাখ এবং দুআও করতে থাক। তো যে এভাবে চেষ্টা ও দুআ একসাথে জারি রাখবে, এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার মোআমালা বা আচরণ হল- আল্লাহ তাআলা একে আযাব দিবেন না। আল্লাহ তাআলা তাকে গুনাহ ও নাফরমানী থেকে হেফাযত করবেন। নতুবা কম সে কম তাকে মাফ করে দিবেন।
একটি শিক্ষণীয় ঘটনা
আমি আপনাদেরকে একটি ঘটনা শোনাই। ঘটনাটি আমার নিজের সাথেই ঘটেছে। আজ থেকে বেশ কয়েক বছর আগে জার্মান থেকে আমার কাছে এক ব্যক্তির একটি চিঠি আসে। সে মূলত পাকিস্তানী। পরবর্তীতে জার্মানের নাগরিক হয়ে গেছে। তার নামটা এখনও আমার মনে আছে- আবদুল লতীফ। সে চিঠিতে উল্লেখ করে- আমি রুটিরুজির তালাশে পাকিস্তান থেকে জার্মান চলে আসি। তখন ধর্মকর্মের প্রতি আমার আগ্রহ-আকর্ষণ কিছুই ছিল না। নামায-রোযা বা অন্য কোনো দ্বীনী বিষয়ের প্রতি আমার কোনো ভ্রুক্ষেপই ছিল না। ব্যস ¯্রফে পেটের দায়ে পাকিস্তান ছেড়ে জার্মানে পাড়ি জমাই এবং এখানেই স্থায়ী হয়ে যাই। এখানে থাকতে থাকতে জার্মানী এক মেয়ের সাথে আমার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সে খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারী। তখন দ্বীন-ঈমানের প্রতি আমার মোটেও তাওয়াজ্জুহ ছিল না। নামায-রোযা, যাকাত, কুরবানী কোনো বিষয়ে কোনো খবর নেই। একেবারে বেলাগাম চলতে থাকি। আমাদের মাঝে সম্পর্ক আরো গভীর হতে থাকে। একপর্যায়ে আমরা বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হই এবং আমি ওরকমই উদাস জীবন যাপন করতে থাকি। আমাদের ঘর-সংসার যথারীতি চলতে থাকে। কিছুদিন পর আমি এক পুত্রসন্তানের পিতা হই।
ছেলে আমার ধীরে ধীরে বেড়ে উঠতে থাকে। যখন তার কিছুটা পড়ার বয়স হয়, দেখি তার মা তাকে ঈসায়ী ধর্মমতের দীক্ষায় বড় করছে। এ দেখে আচানক আমার ভেতর থেকে একটি মুসলিম সত্তা জেগে ওঠে। গায়রত যেন আমার পুরো দেহটাকে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে তোলে- আরে! এ তোর সন্তান হয়ে এখন কি না ঈসায়ী দীক্ষা গ্রহণ করছে! ঐদিন থেকে আমি আমাকে ভিন্নভাবে উপলব্ধি করছি। আমি সংকল্প করলাম, আমি ওকে এ থেকে অবশ্যই বিরত রাখব। আমি ওর মাকে বললাম, এ আমার ছেলে। তুমি একে তোমার মনমত খ্রিস্টধর্ম অনুসারে শিক্ষা দিতে পার না। সে আমাকে পাল্টা জবাবে বলে, কেন আমি তাকে শেখাব না? সে আমারও সন্তান। আমি আমার নিকট যা সত্য ও সঠিক মনে করি আমার ছেলেকে তা অবশ্যই শেখাব। তুমি আমাকে এতে কোনোভাবেই বাধা দিতে পার না। আমি তাকে বললাম- না, তোমার ধর্ম সঠিক নয়; আমার ধর্মই সঠিক। সে আমাকে বলে, তোমার ধর্ম কেন সঠিক? আমাকে বুঝিয়ে বল। এখন যখন ধর্ম নিয়ে তার সাথে আলোচনা শুরু হল, দেখি যে, খ্রিষ্টধর্ম সম্পর্কে তো তার যথেষ্ট ধারণা রয়েছে; কিন্তু আমি তো আমার ধর্ম সম্পর্কে কিছুই জানি না। ফল এই দাঁড়াল যে, ধর্ম বিষয়ে যখনই বিতর্ক হয় সে জিতে যায় আর আমি কোনো কিছুই বলতে পারি না। এভাবেই এখন সংসার চলছে।
এই সংকটময় পরিস্থিতিতে আমি নামায-রোযার প্রতি কিছুটা মনোযোগী হই। কিছুটা ধর্ম পালন শুরু করি। কিন্তু ধর্ম নিয়ে কথা বলতে গেলে আমি তার সাথে আর পেরে উঠি না।
হযরত! সে আমার সন্তানের জীবন ধ্বংস করছে। তাকে খ্রিস্টান বানিয়ে ফেলছে। আল্লাহর দোহাই দিয়ে বলছি, আপনি আমাকে উদ্ধার করুন।
এ চিঠি আমার নিকট পৌঁছে। আমি আল্লাহর কাছে দুআ করি- আল্লাহ, বেচারা কঠিন মছিবতে ফেঁসে আছে। আপনি আমার মনে এরকম কোনো মশওয়ারা ঢেলে দিন, যাতে এর একটি সুরাহা হয়।
Comments
Post a Comment